বলবো বলবো করে বলা হয়নি যে কথা

0
495
আদর্শই যাদের সম্বল
হাছিবুর রহমান
কনকনে শীতের সকাল, শুক্রবার বৌ, বাচ্চাদের নিয়ে তৈরি, পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার মাঝেরচর খ্যাত চরের মানুষ তথা শিশুদের সাথে সারাদিন থাকবো খেলবো ও দুপুরে ওদের সাথে খাবো। আমাদের নাছির ভাই থাকেন ক্যনাডায় অসহায় গরীব দুঃখি মানুষের হৃদয়ের মনি, যিনি আমাকে বললেন হাছিব ভাই চরের বাচ্চাদের জন্য দুটি খাশি উপহার পেয়েছি দুজনে দিয়েছে আর কিছু টাকা হলে অর্থাৎ পুরস্কারের ব্যবস্থা হলে ওদের এবছরের পিকনিক ও বার্ষিক ক্রীড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্টাঠান হয়ে যায় , আমি একচাঞ্চেই বলে ফেললাম আমি দিবো । যাই হোক কথা সেটা নয়, ক্রীড়া অনুষ্ঠান চলছে , আমি কয়েকটি ইভেন্ট এর বিচারকের দায়িত্ব পালন করার ফাঁকে চকলেট এর বক্স নিয়ে বিতরণ করা শুরু করি, শিশু, যুবক, ছেলে, মেয়ে, তাদের মা, বাবা, দাদা, দাদী অর্থাৎ উপস্থিত সকলের মাঝে। ঘটে যায় এক আশ্চর্য ঘটনা, আমি একাধিকবার ঘুরে ফিরে চেষ্টা করি যে কাউকে দুইটি চকলেট দিবো । আমি প্রথমে শিশুদের মাঝে চেষ্টা করি যে তারা তো একটু চকলেটেরপ্রতি লোভী থাকে দেখি ওদের কাউকে দুইটি চকলেট দেয়া যায় কিনা? না আমি সেখানে ফেল করে শুরু করলাম তাদের চেয়ে একটু যারা বড় , মনে করলাম ওরা তো একটু বড় এবং চালাক ওরা মনে হয় দুবার নিবে । না, সেখানেও ফেল। এর পরে যুবক, মহিলা, বুরো, সর্বশ্রেণির মানুষের কাছে আমি ফেল, এক বুড়ি তো আমাকে একটা জারি দিয়েই বললো আমরা কি লোভা নাকি আমাকে যে দুইটা দেতে চান? একটি ছোট বাচ্চার উচ্চারণ ছিল এরকম “আমি তো এততা পাইতি আর এততা নিমু তেন? এ কথা গুলো বলার একটাই কারন এরকম একটি অনুষ্ঠান যদি আমরা শহর কেন্দ্রিক করতাম হয়তোবা দুশ চকলেট দিয়ে একশো জনকে দিতে পারতাম কিনা আপনারাই সেটা বলবেন। খেলো শেষ করে পুরস্কার দিতে দিতে সময় হয়ে গেল জুময়ার নামাজের , ছোট্ট একটি মসজিদ কানায় কানায় ভরে গেল মসজিদটি উপরে টিন চার পাশে বেড়া থাকলেও নিচের অবস্থা খুবই খারাপ, ইটের খোয়ার উপরে হোগলাপাতা বিছানো, ছেজদা দিতে গেলে নাক কপাল মিলেনা তার পরেও কেন যেন সেখানে নামাজ আদায় করে শহরের টাইলস করা মসজিদ থেকে একটু আলাদা আবহ পেলাম, কারন মসজিদের মুসল্লি মানুষগুলো হল অরিজিনাল বাংলার কাদায় গড়া, একথা আবার কেন বললাম ?শুনুন তাহলে, আমার বাচ্চা দুটোকেও মসজিদে নামাজের জন্য নিয়ে গেলাম এক মুরব্বি দাদার বয়সী হবে , ওদেরকে তাদের কাঁদের গামছা বিছিয়ে দিয়ে বললো দাদুরা তোমরা এখানে বসো খালি ওগলায় বইলে বালি লাগবে আনে আর খোয়ার গুতায় কষ্ট অইবে আনে। আমার চোখে কেন যেন পানি চলে এলো , এটাই হল রাসুলের আদর্শ, অথচ দেখেন আমাদের শহরের মসজিদ গুলোতে ছোট বাচ্চারা গেলে তাদেরকে ঠেলে পিছনের কাতারে দেয়া হয়। নামাজ শেষে খাবারের আয়োজন, ওখানে প্রায় শতাধিক শিশু আছে তারা সহ আমরা প্রায় ১৫০ জনের খাবারের আয়োজন , সার্বিক দায়িত্বে ছিল আলতাফ ভাই সে বললো ডিম কয়টা কম আছে সকলের জন্য একটা করে হবে না , আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম কিছু শিশুদের অর্ধেক করে দিবো, তাই করলাম । সেখানেও পেলামনা কোন শিশু অথবা কোন অভিভাবকের অভিযোগ। আমি খুব টেনশনে ছিলাম অভিভাবকেো কোন চিল্লাচিল্লি করে কিনা? যে ওর ছেলে একটা পেল অথছ আমার ছেলে অর্ধেক পেল ? না সেই রকম কোন অভিযোগ কেউ তুললো না। আমি আশ্চর্য এবং বিশ্বিত হতে থাকলাম ওদের চরিত্র দেখে । এক পর্যায়ে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এবং নাছির ভাইয়ের পিতাকে (মরহুম) বললাম কাকা এখানে এরকম যত অনুষ্ঠান হবে আমি ইনশাআলাহ যতদিন জীবীত আছি আসবো । তিনি সেদিন হাটতে হাটতে বলছিল আমি কয়দিন বাচি জানিনা, নাছির সহ তোমরা যারা আছো এইসব মানুষের দিকে একটু খেয়াল রেখো, এখানের মানুষগুলো অল্পতেই খুশি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here