বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিসালাম এর জীবনের বিস্ময়কর ঘটনা মিরাজের ইতিহাস

0
1256
সবে মিরাজ

-ফিরোজ রব্বানী

পবিত্র মিরাজের সত্যতা এবং ঘটনা সম্পর্কে অনেকেই ভিন্নমত পোষণ করেন। এই মেরাজ কবে সংঘটিত হয়েছিলো ? এ সম্পর্কে সীরাত রচয়িতাদেরমধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।
যেমন-(এক) তিবরানী বলেছেনঃ যে বছর আল্লাহর রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নবুয়ত দেয়া হয় সে বছরই।
(দুই) ইমাম নববী ও ইমাম কুরতবী লিখেছেনঃ নবুয়তের পাঁচ বছর পর।
(তিন) হিজরতের ষোল মাস আগে অর্থ্যাৎ নবুয়তের দ্বাদশ বছরে রমযান মাসে।
(চার) নবুয়তের দশম বর্ষের ২৭শে রজব। আল্লামা মুনসুরী এ অভিমত গ্রহণ করেছেন।
(পাঁচ) হিজরতের আগে এক বছর দুই মাস আগে, অর্থ্যাৎ নবুয়তের ত্রয়োদশ বর্ষের মহররম মাসে।
(ছয়) হিজরতের এক বছর আগে অর্থ্যাৎ নবুয়তের ত্রয়োদশ বর্ষের রবিউল আউয়াল মাসে।মেরাজের ঘটনা সম্পর্কে একজন অমুসলিমের সাক্ষ্য
তাফসিরে ইবনে কাসিরে রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের কাছে পত্র লিখে, হজরত দাহইয়া ইবনে খলিফাকে পাঠান। রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস পত্র পাঠ করার পর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অবস্থা জানতে আরবের কিছু লোককে দরবারে ডাকেন। আবু সুফিয়ান ইবনে হরব ও তার সঙ্গীরা সে সময় বাণিজ্যিক কাফেলা নিয়ে সে দেশে ছিল। তারা দরবারে হাজির হলো। হিরাক্লিয়াস তাদের যেসব প্রশ্ন করেন, সেগুলোর বিবরণ বুখারি ও মুসলিমে রয়েছে। আবু সুফিয়ানের আন্তরিক বাসনা ছিল, এ সুযোগে সে রাসুলুল্লাহ (সা.) সম্পর্কে এমন কিছু বলবে, যাতে সম্রাটের কাছে তার ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু আবু সুফিয়ান নিজেই বলে, আমার এ কাজে একটি অন্তরায় ছিল, তা হলো আমার মুখ দিয়ে কোনো সুস্পষ্ট মিথ্যা বের হলে সম্রাটের দৃষ্টিতে হেয়প্রতিপন্ন হব। এবং আমার সঙ্গীরা আমাকে মিথ্যাবাদী বলে র্ভৎসনা করবে। তখন আমার ইচ্ছা জাগে মেরাজের ঘটনাটি বলতে। এটা যে মিথ্যা ঘটনা, তা সম্রাট নিজেই বুঝে নেবেন। আমি বললাম, একটি ঘটনা বর্ণনা করছি, আপনি নিজেই বুঝবেন যে ব্যাপারটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করলেন, ঘটনাটি কী? আবু সুফিয়ান বলল, নবুওয়াতের এই দাবিদারের উক্তি এই যে সে এক রাতে মক্কা মুকাররমা থেকে বের হয়ে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত পৌঁছে এবং প্রত্যুষের আগে মক্কায় আমাদের কাছে ফিরে আসে।
বায়তুল মুকাদ্দাসের সর্বপ্রধান যাজক ও পণ্ডিত তখন রোম সম্রাটের পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বললেন, আমি সে রাত সম্পর্কে জানি। রোম সম্রাট তাঁর দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এ সম্পর্কে কী জানেন? তিনি বললেন, আমার কাজ ছিল বায়তুল মুকাদ্দাসের সব দরজা বন্ধ করার আগে আমি ঘুমাতাম না। সে রাতে আমি সব দরজাই বন্ধ করে দিলাম, কিন্তু একটি দরজা আমি বন্ধ করতে পারছিলাম না। অগত্যা কর্মচারীদের ডাকলাম। তারা সবাই চেষ্টা চালাল। কিন্তু তারাও বন্ধ করতে পারেনি। দরজার কপাট মোটেই নড়ছিল না। যেন আমরা কোনো পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা লাগাচ্ছি। আমি অপারগ হয়ে কর্মকার ও মিস্ত্রিদের ডাকলাম। তারা পরীক্ষা করে বলল, কপাটের ওপর দরজার প্রাচীরের বোঝা চেপে বসেছে। এখন ভোর না হওয়া পর্যন্ত দরজা বন্ধ করার কোনো উপায় নেই। সকালে আমরা চেষ্টা করে দেখব, কী করা যায়। অবশেষে তা খোলা রেখেই ফিরে এলাম। সকাল হওয়ামাত্র আমি সে দরজার কাছে গিয়ে দেখি মসজিদের দরজার কাছে ছিদ্র করা একটি প্রস্তর খণ্ড পড়ে আছে। মনে হচ্ছিল ওখানে কোনো জন্তু বাঁধা হয়েছিল। তখন আমি সঙ্গীদের বলেছিলাম, আল্লাহ তায়ালা এ দরজাটি সম্ভবত এ কারণে বন্ধ হতে দেননি যে হয়তোবা আল্লাহর কোনো প্রিয় বান্দা এসেছিলেন। এরপর তিনি বলেন, ওই রাতে তিনি আমাদের মসজিদে নামাজ পড়েন। এরপর তিনি আরো বিশদ বর্ণনা দিলেন (ইবনে কাসির ৩/২৪)
হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিরাজ বা নবমণ্ডলের ভ্রমণ একটি বিস্ময়কর ঘটনা। এই ঘটনা পবিত্র কোরআন ও হাদিস দ্বারা সত্য প্রমাণিত। পরিত্র কোরআনে ‘ইসরা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ইসরা’ শব্দের অভিধানিক অর্থ রাতে ভ্রমণ। রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে ভ্রমণ করেছিলেন বলেই তাকে ‘ইসরা’ বলা হয়েছে। নবমণ্ডলের ভ্রমণকে ‘মেরাজ’ বলে রাসুলে পাক হাদিস শরীফে বর্ণনা করেছেন। মেরাজ উরুজ ধাতু হতে নির্গত। অর্থ উন্নতি বা উর্ধ্বে উঠা। আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় হাবীবকে উর্ধ্বেজাহানে আরোহণ করিয়েছেন বলেই এই ভ্রমণকে মিরাজ বলা হয়
ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় মসজিদুল হারাম হতে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত সফরকে ‘ইসরা’ এবং মসজিদুল আকসা হতে আরশে আজিমে সফরকে মিরাজ বলা হয়। (সূত্রঃ নাদরাতুন না’ঈম আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মতে রাসুল সাল্লাল্লাহহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিরাজ স্বপ্নে বা আধ্যাত্মিকভাবে সংঘটিত হয়নি, সশরীরে জাগ্রত অবস্থায় হয়েছে। দলিল হিসেবে পবিত্র কোরআনের বর্ণিত আয়াত, “পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদুলু হারাম হতে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত” (সূরাঃ ১৭ আয়াতঃ ১)।
উল্লেখিত আয়াতে পাকে ‘সোবহান’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। আরবী ভাষায় বিস্ময়কর সংবাদে ‘সোবহান’ শব্দ ব্যবহৃত হয়। সশরীরে জাগ্রত অবস্থায় মিরাজ সংঘটিত হয়েছে বলেই বিস্ময়কর ঘটনা বলতে হবে। অন্যথায় নয়। আয়াতে করিমায় উল্লেখিত ‘আবদ’ (বান্দা) শব্দটি দ্বারাও আত্মা ও দেহ বুঝিয়েছেন, শুধু আত্মাকে নয়।
কিন্তু পবিত্র কোরআন-হাদিসে এর সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। এমন সত্য ঘটনাকে উপলব্ধি বা হৃদয়ঙ্গম করা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের কর্তব্য।হজরত আবু বকর (রা.) সর্বপ্রথম শবে মিরাজের বাস্তব ঘটনার সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। আর এ জন্য তিনি পেয়েছিলেন ‘সিদ্দিকে আকবর’ খেতাব অর্থাৎ মহাসত্যবাদী। কাজেই আমরা হজরত নবী করিম (সা.)-এর মিরাজ সংঘটিত ঘটনাকে আমাদেরও উচিত ‘সিদ্দিকে আকবরের ন্যায় মিরাজের ঘটনাবলি নিঃসন্দেহে বিশ্বাস স্থাপন করে নিজেদের সাদেকিনদের (সত্যবাদীদের) অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া। যে কোন আজব ঘটনা দেখলেই আমরা বলি سبحان اللهমিরাজের ঘটনা এত আশ্চর্যজনক এর বর্ননা দিতে গিয়ে আল্লাহ শুরুতে বলেন
سبحان الذي اسري بعبده ليلا من المسجد الحرام الي المسجد الاقصي
এখানে ليلا মানে রাএে সামান্য সময় اي وقت خاص ووقت قليلا এটা হল ২৭ বৎসর কারো কারো মতে মিরাজ স্বপ্নে হয়েছে হয়েছে এবং দলিল হিসেবে আয়েশার হাদিস পেশ করেনما قفد جسد النبي في ليلۃ معرج এছাড়া মুয়াবিয়া রাঃ হাদিস পেশ করেন। هي الرويۃ الصالحۃ এর জবাবে উক্ত আয়াতে عبد শব্দটি দিয়ে স্বশরিরে বলা হয় বর্তমান বিশ্বে বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষের সঙ্গে শবে মিরাজের ঘটনার তুলনামূলক যুক্তি প্রদর্শনে না গিয়ে পবিত্র কোরআন হাদিসসহ নির্ভরযোগ্য তথ্যমূলক গ্রন্থগুলোর আলোকে এখানে আমি শবে মিরাজের সারসংক্ষেপ তুলে ধরছি।
রজব চাঁদের ২৬ তারিখ দিবাগত রাত। মহানবী হজরত রাসুলে মকবুল (সা.) এশার নামাজ সম্পন্ন করে উম্মেহানির ঘরে ঘুমিয়েছিলেন। সে সময় হজরত জিব্রাইল (আ.) সেখানে উপস্থিত হয়ে বুরাক নিয়ে আসেন এসম্পর্কে হাদিসে আসেدبۃ الابيض فوق حمار دون بغلএটা এমন নুরের প্রানী যা গাধার চেয়ে বড় খচ্চরের চেয়ে ছোট এটা হল বুরাক (বুখারী)(সতর্কবানী হল বুরাকে নামে যে ছবি কেলেন্ডারে পাওয়া যায় যার মাথা সুন্দরী মেয়ে দেহটি ঘোড়ার মত এটা ভুয়া) জিবরাঈল মানুষেররুপ এসে রাসুলকে বলেনশুভবার্তা জানান, হে মহান আল্লাহর পেয়ারা নবী, আপনি জাগ্রত হোন এবং উঠে পড়ুন। আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে আপনার জন্য দ্রুতগামী বাহন বিদ্যুতের চেয়ে অধিক শক্তিসম্পন্ন বোরাক নিয়ে এসেছি। আপনার অভ্যর্থনার জন্য সব ফেরেশতা ও নবী-পয়গম্বর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।ঘরের ছাদ ফাঁক হয়ে হযরত জিব্রাঈল (আ.) ও কয়েক ফেরেস্তা শুভ আগমণ করলে। জিব্রাঈল (আ.) প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহর পক্ষ থেকে আহ্বান জানিয়ে মসজিদে হারামে নিয়ে গেলেন। সেখানে গমণের পর তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। হযরত জিব্রাঈল ও মিকাঈল (আ.) তাঁকে জাগ্রত করে যমযম কূপের নিকট নিয়ে বক্ষ মোবারক বিদীর্ণ করে ধৌত করেন। অতঃপর ঈমান ও হিকমত তাঁর সীনা মোবারকে অর্পণ করলেন এবং দুই স্কন্ধের মাঝে মহরে নবুওয়াত লাগিয়ে দিলেন। এই মহরে নবুওয়াত ছিল শেষ নবী হওয়ার একটি বাহ্যিক নিদর্শন। এই উর্ধ্বেলোকে মুবারক আরোহণ উপলক্ষে আল্লাহ পাক বেহেস্তের তত্ত্বাবধায়ক ফেরেস্তা রিদওয়ানকে নির্দেশ করলেন, অদৃশ্য জগতের মেহমানকে নতুন সাজে সজ্জিত করতে। হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালামকে আদেশ করলেন, বিদ্যুৎ ও আলোর চেয়ে দ্রুতগামী বাহন বোরাক নিয়ে মাকামে ইব্রাহীমে হাজির হতে। জড় জগতের ফেরেস্তাদের নির্দেশ দিলেন, পানি ও মাটির দেশের কাজ বন্ধ করে স্থান ও সময়কে গতিশূন্য ও স্তবির করতে। আসমানের ফেরেস্তাদের বলা হলো সকল কাজ বন্ধ করে সম্মানিত অতিথির আগমনে জুলুস বের করতে। প্রিয় নবী তাজেদারে মদিনা হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বোরাকের উপর করে বায়তুল মোক্কাদ্দিসের উদ্দেশে যাত্রা করলেন। হযরত শাদ্দাদ ইবনে আওস (রা.) হতে বর্ণিত প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাগহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, বাইতুল মোক্বাদ্দিস যাত্রাকালে বোরাক থেকে নেমে দুরাকাত নামাজ আদায় করতে অনুরোধ করলে আমি দুরাকাত নফল নামাজ আদায় করি। অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, আপনি ইয়াসরিব তথা মদিনা মুনাওয়ারায় নামাজ আদায় করেছেন, যেখানে হিজরত করে আপনি আশ্রয় গ্রহণ করবেন। মদিনা হতে আবার যাত্রা আরম্ভ করলেন। কিছুদূর অতিক্রম করার পর হযরত জিব্রাঈল (আ.) প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বোরাক থেকে অবতরণ করে নামাজ আদায় করতে আরজ করলে তিনি নামাজ আদায় করেন। হযরত জিব্রাঈল (আ.) বললেন, এটা সিনাই পাহাড়, এখানে যে গাছ দেখছেন তার নিকট হযরত মূসা (আ.) আল্লাহর সাথে কথা বলতেন। আবার ভ্রমণ শুরু হলো। কিছুদূর পর জিব্রাঈল (আ.) বললেন, বোরাক থেকে নেমে সালাত আদায় করুন। নবীজি তাই করলেন। জিব্রাঈল (আ.) বললেন, আপনি হযরত শুয়ায়ব (আ.) এর আবাস মাঠে সালাত আদায় করলেন। আবার যাত্রা শুরু করে কিছুদূর যাওয়ার পর জিব্রাঈল (আর.) মাটিতে নেমে নামাজ পড়তে বললেন তিনি নামাজ আদায় করেন। অতঃপর জিব্রাইল (আ.) বললেন, এই জায়গার নাম বাইতুলাহম (বেথেলহাম), হযরত ঈসা (আ.) এখানেই জন্মগ্রহণ করেনঅন্য বর্ননায় আছে হজরত জিব্রাইল (আ.)-এর এমন সুমধুর ডাক শুনে মহানবী (সা.) জেগে ওঠেন এবং হাওজে কাওসারের পানি দিয়ে অজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহপাকের নির্দেশ মোতাবেক পবিত্র বোরাকে আরোহণ করেন এবং হাজার হাজার স্বর্গীয় ফেরেশতার পরিবেষ্টনে ‘বোরাক’ ঊর্ধ্বালোকে ছুটে চলল। এবার আল্লাহর পেয়ারা নবী মুহাম্মদ (সা.) বোরাকে উঠেই কেঁদে ওঠেন এবং দুহাত তুলে ফরিয়াদ করেন, হে আল্লাহ দয়াময়, আজ আপনি আমাকে পরম অভ্যর্থনায় বোরাক করে আপনার দরবারে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু রোজ হাশরে আমার প্রিয় উম্মতের অবস্থা কী হবে? ইরশাদ হলো, হে নবী উম্মতে মুহাম্মদী রোজ হাশরে এমনিভাবে সম্মান পাবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বাণী শুনে হজরত রাসুল করিম (সা.) শুকরিয়া জানালেন এবং তাফসীরে এসেছে বায়তুল মোকাদ্দাস আসে বুরাক মাএ ২ কদম দিয়ে মক্কা হতে এসে দেখেন ২ লক্ষচব্বিস হাজার পূর্ববর্তী নবী রাসুলদের উপস্থিতি কিন্তু ইমাম নেই এরপর জিবরীল রাসুলকে বলেন আজকের নামাজে ইমামতি আপনি করবেনহাদিসে আসে فامني جبريل জিবরীল আমাকে ইমাম বানায় এরপর দুই রাকাত নামাজের ইমামতি করেন।
কোন রেওয়াতে আছে এরপর আল্লাহর পেয়ারা হাবীব হজরত মুহাম্মদ (সা.) বোরাকে আরোহণ করে বিশ্বস্রষ্টার নভোমণ্ডলের অপরূপ দৃশ্য দেখে বিমোহিত হন।যখন বুরাক প্রথম আসমানে যান দরজা খুলে দেওয়া হয় দেখেন একজন মহাপুরুষ আসনে বসা আছেরাসুল সাঃ জিব্রাইলকে বলেন يا جبريل من هذا الرجل قال هذا ابوك ادام প্রথম আসমানে হজরত আদম (আ.)-এর সাক্ষাৎ হয় এবং হজরত আদম (আ.) আল্লাহর প্রিয় বন্ধু মুহাম্মদ (সা.)-কে সাদর অভ্যর্থনা জানান। এ সময় গোটা নভোমণ্ডল থেকে ধ্বনি ওঠে মারহাবা, মারহাবা। দেখলেন আদম আঃ ডান দিকে তাকিয়ে হাসেন ও বামদিকে তাকিয়ে। পরে জানলেন ডানে ইল্লিনে জান্নাতিরা বামে সিজ্জিনে জাহান্নামিরা।
এরপর তিনি প্রথম আকাশে দেখলেন একটি বিশাল মুরগ রয়েছে। রাসুল বলেন এটা কি জিবরীল, উওরে সে বলল এটা একটা ফেরেশতা ডাকে سبوح قدوس ربنا ورب الملاءكۃএর সাথে মিলিয়ে দুনিয়ার সকল মুরগ বলে একই কথা দ্বিতীয় আসমানে স্বরীরে হজরত ঈসা (আ.) ও হজরত ইয়াহিয়া,তৃতীয় আসমানে হজরত ইউসুফ (আ.),চতুর্থ আসমানে হজরত ইদ্রিস (আ.),পঞ্চম আসমানে হজরত হারুন (আ.),ষষ্ঠ আসমানে হজরত মুসা (আ.) এবং সপ্তম আসমানে হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সাক্ষাৎ ঘটে।তার চারপাশে ছোট শিশুরা তাসবীহ পড়তেছে রাসুল সাঃ জিবরীলকে প্রশ্ন করলে এই শিশুরা কে উওরে বলে এরা নিস্পাপ শিশু নাবালেক অবস্হায় মৃতবরনকারী মুসলিম সন্তান । তারপর চারপ্রকার শরবত দেওয়া হয়মদ,দুধ,মধু,। রাসুল সাঃ পবিএ পানি পান করেন। কোন কোন তাফসীরে আছে জিবরীলকে নিয়ে একটি মহলে যান সেটা মাঝে হাওজে কাওসার আছে গিয়ে দেখেন তালাবদ্ধ লিখা আছে من قال قبل كل عمل بسم اشربه এর চাবি হল বিসমিল্লাহ্‌ তারপর তালাখুলে ভিতরে যান দেখেন বিশাল এক কুয়াআকাশে তারকার চাইতে সুন্দর বাটি যা দিয়ে পানি পান করানো হবে রাসুল সাঃ বলেন حوضي مسيرته شهرا وماءه ابيض من لبن وريحه اطيب من مسك এটা এতবড় একমাসের পথ, এর পানি দুধের চেয়ে সাদা মেশকের চাইতে সুগন্ধি। পরে বায়তুল মা’মুর নামক আসমানি পবিত্র কাবাগৃহে ফেরেশতাদের নিয়ে আবার দুই রাকাত নামাজ আদায় করে এটা পৃথিবীর কাবার বরাবর সাত আসমান উপরে ফেরেশতাদের এবাদতের জন্য নির্মিত যা প্রতি মুহুর্তে ৭০ হাজার ফেরেশতা তাওয়াফ করে কেয়ামতের পুর্বে তারা আর তাওয়াফ করার সুযোগ পাবেনা।‘সিদরাতুল মুনতাহা’ নামক স্থানে গিয়ে অবতরণ করেন। মানে এটা সৃষ্টি শেষ বৃক্ষ বড়ই গাছ এর রঙ প্রতি মুহুর্তে পরিবর্তন। এখানে এসেই ‘বোরাক’ থেমে গিয়েছিল।ই বৃক্ষটির নাম “সিদরাতূল মোনতাহা”। সিদরাতূল মোনতাহার র্ধ্বালোকের শেষ সীমার বরইগাছ, (সিদরাতূল মোনতাহা এক বড় প্রকাণ্ড কূল বৃক্ষবিশেষ, যাহার এক একটা কুল হজর অঞ্চলে তৈয়ারী বড় বড় মটকার ন্যায় এবং তাহার পাতা হাতীর কানের মতো। ফেরেশতারা এরপর আর যেতে পারেন না। তথায় চারটি প্রবাহমান নদী দেখিতে পাইলাম- দুইটি ভিতরের দিকে প্রবাহিত এবং দুইটি বাইরের দিকে। নদীগুলির নাম সম্পর্কে আমি জিব্রাঈলকে জিজ্ঞাসা করিলাম। তিনি বলিলেন, ভিতরের দুইটি বেহেশতে প্রবাহমান (সালসাবিল ও কাওসার নামক) দুইটি নদী। আর বাহিরের দিকে প্রবাহমান দুইটি হইল (ভূ-পৃষ্ঠের মিসরে প্রবাহিত) নীল ও (ইরাকে প্রবাহিত) ফোরাত (নদী বা তাহাদের নামের মূল উৎস)। তারপর আমাকে “বায়তুল মা’মুর” পরিদর্শন করান হইল। তথায় প্রতিদিন (এবাদতের জন্য) সত্তর হাজার ফেরেশতা উপস্থিত হইয়া থাকেন (যে দল একদিন সুযোগ পায় সেই দল চিরকালের জন্য দ্বিতীয় দিন সুযোগ গ্রাপ্ত হয় না)।
অন্যএ আছে সিদরাতুল মুনতাহার অভূতপূর্ব স্বর্গীয় আভা দেখে তিনি বিমোহিত হন। হজরত জিব্রাইল (আ.) জানান, হে আল্লাহর নবী এই পর্যন্ত আমার সীমানা। এর পরে আর আমার অগ্রসর হওয়ার সাধ্য নেই। এসম্পর্কে বলা হয়েছে
وهوبالافق الاعلي فكان تتدلها فكان قاب قوسين او ادني
সূরা নাজম এ হযরত জিব্রাঈল (আঃ) এর নৈকট্যের কথা উল্লেখ রয়েছে। হযরত আয়েশা (রাঃ) সেই কথাই বর্ণনা করেছেন।পক্ষান্তরে মে’রাজের হাদিসে যে নৈকট্যের কথা বলা হয়েছে, সে সম্পর্কে ব্যাখ্যা হচ্ছে এই যে, এটা আল্লাহরই নৈকট্য। সূরা নাজম এ সম্পর্কে কোন ব্যাপকআলোচনা নেই। বরং সেখানে বলা হয়েছে, প্রিয় নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দ্বিতীয়বার “ সেদরাতুল মুনতাহা”র কাছে দেখেছেন। যাঁকে দেখেছেন তিনি জিব্রাঈল(আঃ)। নবী করিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত জিব্রাঈল (আঃ) কে তার আসল চেহারায় দু’বার দেখেছেন। একবার পৃথিবীতে দ্বিতীয়বার “সেদরাতুল মুনতাহা’রকাছে।এ সময়েও প্রিয় নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর “শাককুস সদর” বা সিনাচাকের ঘটনা ঘটেছিল। এ সফরের সময় তাকে কয়েকটি জিনিস দেখানো হয়েছিল। তাঁকে দুধএবং মদ দেয়া হয়েছিল। তিনি দুধ গ্রহণ করলেন। এটা দেখে হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন, আপনাকে ফেতরাত বা স্বভাবের ফল দেখানো হয়েছে। যদি আপনি মদ গ্রহণকরতেন তবে আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হয়ে যেত।আল্লাহর রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চারটি নহর দেখলেন। চারটি যাহেরী, আর চারটি বাতেনী। প্রকাশ্য নহর ছিল নীল এবং ফোরাত। এর তাৎপর্য সম্ভবত এইযে, তার রেসালাত নীল এবং ফোরাত সজীব এলাকা সমূহে বিস্তার লাভ করবে। অর্থ্যাৎ এখানের অধিবাসিরা বংশ পরস্পরায় মুসলমান হবে। এমন নয় যে, এ দুটি নহরের পানিরউৎস জান্নাতে রয়েছে।জাহান্নামের দারোগা মালেককে তিনি দেখলেন, তিনি হাসেন না, তার চেহারায় হাসি খুশির কোন ছাপও নেই। আল্লাহর রসুলকে বেহেশত ও দোজখ দেখানো হল।এতিমের ধন-সম্পদ যারা অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করে, নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাদের অবস্থাও দেখানো হলো। তাদের ঠোঁট ছিলো উঁটের ঠোটের মত।তারা নিজেদের মুখে পাথরের টুকরার মত মত অঙ্গার প্রবেশ করাচ্ছে আর সেই অঙ্গার তাদের গুহ্যদ্বার দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।নবী করিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদখোরদেরও দেখেছিলেন । তাদের ঠোঁট এতবড় ছিল যে, তারা নাড়াচাড়া করতে পারছিল না। ফেরাউনের অনুসারীদেরজাহান্নামে নেয়ার সময় তারা এসব সুদখোরকে মাড়িয়ে যাচ্ছিল।যেনা কারীদেরও তিনি দেখেছিলেন। তাদের সামনে তাজা গোশত এবং দুর্গন্ধময় পঁচা গোশত ছিল, অথচ তারা তাজা গোশত রেখে পঁচা গোশত খাচ্ছিল।যেসব নারী স্বামী থাকা সত্তেও নিজ গর্ভে অণ্যের সন্তার ধারন করেছিল, প্রিয় নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরও দেখেছিলেন। নবী সাল্লালাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম লক্ষ্য করলেন যে, ওই সব মহিলার বুকে বড় বড় কাঁটা বিধিয়ে শুন্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।তিনি মক্কার একটি কাফেলাকে দেখেছিলেন। সেই কাফেলার একটি উট পালিয়ে গিয়েছিলতিনি তাদেরকে সেই উটের সন্ধান বলে দিয়েছিলেন। ঢেকে রাখা পাত্রে পানি ছিলো,তিনি সেই পানি থেকে পান করেছিলেন। সে সময় কাফেররা সকলে ঘুমাচ্ছিল। মেরাজের রাতের পরদিন সকালে এই বিবরণ তাঁর দাবীর সত্যতার একটি প্রমাণ হয়েছিলো।বলে দিলেন অমুক সময়ে সে কাফেলা ফিরে আসবে। কাফেলা থেকে পালিয়ে যে উটটি মক্কায় ফিরে আসছিলো তিনি সে উটটির বিবরণও পেশ করলেন। পরবর্তী সময়ে তাঁর সবকথাই সত্য প্রমাণিত হয়। কিন্ত এতকিছু সত্তেও কাফেরদের ঘৃনা আরও বেড়ে গেল এবং তারা তাঁর কথা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানালো।বলা হয়, হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) কে নবীজি সেই সময় সিদ্দিক হন
অতঃপর এখান থেকে মহানবী হজরত রাসুলে করিম (সা.)-কে ‘রফ রফ’ নামক আরেকটি কুদরতি বাহনে আল্লাহ পাকের আরশে মোয়াল্লায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাফসীরে এসেছে বায়তুল মামুর হতে আরশ পর্যন্ত ৭০ হাজার নুরের পর্দা রয়েছে। একটা পর্দাহতে আরেকটি পর্দা দুরত্ব ৫০০ বৎসরের পথ। সেখানে হজরত বিলালের পায়ের আওয়াজ শুনলেন। তাফসীরে অন্য রেওয়াতে এসেছে এ জমিন হতে আসমান ৫০০ বৎসর পথ এভাবে সাত আসমান রয়েছে একই দুরত্বে। এরপর সিদরাতুল মুনতাহা তারপর পানি রয়েছে। পানির উপরে নুরের তৈরি ফেরেশতারা আরশ খুটি বহন করে আছেন এই সুন্দর ঐ ফেরেশতা যাদের পা জমিনের নিচে। আরশে ডানে কলম, তাকদীর, লওহে মাহফুজ, জান্নাতুল ফেরাদউছ। তারপর রাসুল সাঃ আরশে উঠবেন দেখে পায়ে জুতা, এটা খুলতে চাইলে আল্লাহ নিষেধ করেন। রাসুল চিন্তা করলেন মুসা আঃ কে তুরে সিনা উঠার সময় আল্লাহ বলেন। হে মুসা জুতা খুলোيا موسي فاخلع نعليكআল্লাহ বললেন মুসা আর মুহাম্মদ একনয়। জুতা খুলবেন না। তারপর আল্লাহর সাথে কথা বার্তা শুরু হয় কোরআনে আসেفاوحي الي عبده مااوحي রাসুল বলেন আমার জীবনের সকল কাজকর্ম আপনার জন্য التحيۃ لله والصلوۃ والطيبات আল্লাহ উওরে বললেন আমার সকল শান্তি রহমত তোমাকে দিলামالسلام عليك ايها النبي ورحمۃ اللهরাসুল বলেন আমি সহ সমস্ত উম্মতের মাঝে এটা বিলিয়ে দিলামالسلام علينا وعلي عبادالله الصالحين ফেরেশতা তখন বললاشهد ان لا اله الا الله واشهد ان محمد عبده ورسوله
তারপর জান্নাতে গেলেন দেখলেন হজরত ইদ্রিস ঘুরাঘড়ি করছেন প্রবেশ করলেন দেখলেন অধিকাংশ লোকগুলো গরিবছিল তারপর জাহান্নামে গিয়ে দেখেন অধিকাংশ মেয়েলোককে তাদের লজ্জাস্হানে শাস্তুি দেওয়া হছ্ছে। ফিরে আসার সময় আল্লাহ ৫০ ওয়াক্ত নামাজ উপহার দিলেন। পরে মুসা পরার্মশে এটা ৫ ওয়াক্ত করেদেন আল্লাহ। আল্লাহর সিদ্ধান্ত হয়من جاء بالحسنۃ فله عشرۃ امثالهاএক ওয়াক্ত পড়লে ১০ ওয়াক্ত সওয়াব দেওয়া হবে
এছাড়া কোন কোন তাফসীরে এসেছে মিরাজে কিছু আল্লাহর হুকুম যা আল্লাহ কোরআনে বলেন وقضي ربك মিরাজের রাএির সিদ্ধান্তالا تعبد الا الله
১. আল্লাহর এবাদত করাوبالوالدين الاحسان
২. পিতা মাতার উপর এহসান করা
وَآتِ ذَا الْقُرْبَى حَقَّهُ وَالْمِسْكِينَ وَابْنَ السَّبِيل
৩. প্রতিবেশি, এতিম, মিশকিন, বাস্তুহারা দের পাওনা দেওয়া।
ِ وَلاَ تُبَذِّرْ تَبْذِيراً
৪. অপচয় করবে না
وَلاَ تَجْعَلْ يَدَكَ مَغْلُولَةً إِلَى عُنُقِكَ وَلاَ تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُوماً مَّحْسُوراً
৫. সম্পদশালীরা কৃপনতা ও অতিরিক্ত খরচ বর্জন করবে।
وَلاَ تَقْتُلُواْ أَوْلادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلاقٍ نَّحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُم إنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْءاً كَبِيراً
৬. সন্তান হত্যা হারাম।
ولا تَقْرَبُواْ الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاء سَبِيلاً
৭.জিনা ব্যভিচার কাছে যেওনা।
«ولا تقتلوا النفس التي حرم الله إلا بالحق ومن قتل مظلوماا»
৮. নিরপরাধিকে হত্যা করা হারাম।
لاَ تَقْرَبُواْ مَالَ الْيَتِيمِ إِلاَّ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ حَتَّى يَبْلُغَ أَشُدَّهُ وَأَوْفُواْ بِالْعَهْدِ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْؤُولا
৯. এতিমের সম্পদ আত্বসাদ ভক্ষন করা হারাম।
أَوْفُوا الْكَيْلَ إِذا كِلْتُمْ وَزِنُواْ بِالقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيمِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً«وأوفوا الكيل» أتموه «إذا كلتم وزنوا بالقسطاس المستقيم» الميزان السوي «ذلك خير وأحسن تأويلا» مآلا
১০. ব্যবসায় ওজনে কম দেওয়া হারাম।
لاَ تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولـئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْؤُولاً
১১. যে বিষয়ে সহিহ কোন জ্ঞান নেই তার উপর আন্তাজে আমল করা হারাম।
لاَ تَمْشِ فِي الأَرْضِ مَرَحاً إِنَّكَ لَن تَخْرِقَ الأَرْضَ وَلَن تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُولاً«ولا تمش في الأرض مرحا» أي ذا مرح بالكبر والخيلاء «إنك لن تخرق الأرض» تثقبها حتى تبلغ آخرها بكبرك «ولن تبلغ الجبال طولا» المعنى أنك لا تبلغ هذا المبلغ فكيف تحتال
১২. জমিনে ক্ষমতা ও সম্পদের অহংকারে নিয়ে চলাফেরা করা হারাম।
এগুলো মিরাজের রাএে আপনার নিকট ওহি
ذلِكَ مِمَّا أَوْحَى إِلَيْكَ رَبُّكَ مِنَ الْحِكْمَةِ وَلاَ تَجْعَلْ مَعَ اللّهِ إِلَهاً آخَرَ فَتُلْقَى فِي جَهَنَّمَ مَلُوماً مَّدْحُوراً«ذلك مما أوحى إليك» يا محمد «ربك من الحكمة» الموعظة «ولا تجعل مع الله إلها آخر فتلقى في جهنم ملوما مدحورا» مطرودا من رحمة الله
তাফসীরে আছে রাসুল দেখলেন কিছুলোক জাহান্নামে রক্তের নদিতে সাঁতারাচ্ছে এরা সুদখোর, কিছুলোকের নারীভুরি কেটে ফেলা হচ্ছে এরা এতিমের সম্পদ আত্বসাদকারী, কিছুলোক নিজেদেরকে ছুড়ি দিয়ে খুন করছে এরা আত্বহত্যাকারী। কিছুলোকের লজ্জাস্হানে শাস্তিদান করছে এরা জেনা কারী। এরপর আল্লাহ জিজ্ঞাসা করেন হাবিব আপনি কি খুশি না বেজার।, রাসুল বলেন আমি খুশি তবে আমার উম্মতকে ক্ষমা করে দাও তাদের সাথে কিভাবে দেখা করবে। আল্লাহবলেন বান্দা যখন। সালাত পড়বে তখন তারসাথে কথা বলব হাদিসে আসেالصلوۃ معراج المومنين এছাড়া উম্মতের নাজাতের জন্য সিদ্ধান্ত হয়
হযরত আবদুল্লাহ (রা.) হাতে বর্ণিত হাদিসে আছে, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মেরাজের রাতে আল্লাহর সানি্নধ্যে যাওয়ার পর আল্লাহ পাক আমাকে তিনটি বিশেষ উপহার প্রদান করেছেন
১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ,
২. সূরা বাকারার শেষ দুই আরাফাত,
৩. যে মুসলিম আল্লাহর সাথে শরীক করবেনা তার সকল কবিরা গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
(সহীহ মুসলিম)
তারপর তিনি দুনিয়ায় এসে যখন ঘুমাবেন তখন দেখেন বিচানা গরম, ঘরের জিন্জির লড়তেছে তারপর ফজরের নামাজ পড়ে সাহাবী গনকে বিস্তারিত আলোচনা করেন। আবু জেহেল এসে বলে ভাতিজা তুমি পাগল হয়ে গেছ।
৬ মাসের পথ রাতে কিভাবে গেলে বায়তুল মাকদাসে । রাসুল বলেন আল্লাহ নিয়েছেন। আবু জেহেল বলে সত্যি হলে বলল ঐ মসজিদেরর কয়টি দরজা জানালারাসুলের সামনে জিবরীল ছবি তুলে ধরলে সব সঠিক উওর দেন রাসুল সাঃ। তারপর সে ইমান আনেনি।- এক ব্যক্তি মেরাজের ঘটনা অস্বীকার করল। একদিন সে স্ত্রীকে মাছ কাটতে দিয়ে নদীতে গোসল করতে যায়। ডুব দিয়ে উঠে দেখে সে মহিলা হয়ে গেছে। সেদিক দিয়ে যাচ্ছিল এক সওদাগর। সে তাকে দেখে বিবাহ করে। তাদের সন্তান-সন্ততি হয় এবং তারা বড় হয়ে যায়। পরবর্তীতে একদিন সে নদীতে গোসল করতে যায়। ডুব দেওয়ার পর দেখে আবার সে আগের পুরুষ ব্যক্তি হয়ে গেছে। তখন সে বাড়িতে ফিরে দেখে তার স্ত্রী এখনো মাছ কাটছে। স্ত্রীকে সব ঘটনা খুলে বলে এবং তার ভুল বুঝতে পারে। এভাবে তার মেরাজের ঘটনা বুঝে আসে
মি‘রাজের প্রাপ্তি :মি‘রাজে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দা মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে স্বীয় সান্নিধ্যে ডেকে নিয়ে উম্মতে মুহাম্মাদীকে পুরস্কার স্বরূপ তিনটি বিষয় প্রদান করেন।
যথা- (১) الصلوات الخمس বা পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত। যা ফযীলতের দিক দিয়ে ৫০ ওয়াক্তের সমান। সুতরাং ছালাত হ’ল উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য আল্লাহর দেওয়া সবচেয়ে বড় পুরস্কার। কারণ ছালাতের মাধ্যমেই মানুষের নৈতিক উন্নয়ন ঘটে। আর নৈতিক উন্নতিই হ’ল সকল উন্নতির চাবিকাঠি।
(২) خواةيم سورة البقرة তথা সূরা বাক্বারাহর শেষের কয়েকটি আয়াত (২৮৫-৮৬)। কারণ এ আয়াতগুলোতে উম্মতের প্রতি আল্লাহর অশেষ রহমত ও অনুগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে এবং
(৩) وغفر لمن لايشرك بالله من أمته شيئا والمقحمات উম্মতে মুহাম্মাদীর মধ্যে যারা কখনো শিরক করেনি, তাদেরকে ক্ষমা করার সুসংবাদ। কারণ শিরক হ’ল পাপসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় পাপ (লোক্বমান ১৩)। মহান আল্লাহ অন্য কোন পাপের কারণে সরাসরি জান্নাত হারাম ঘোষণা করেননি শিরক ব্যতীত (মায়েদাহ ৭২)। আর একমাত্র শিরকের গোনাহ ছাড়া অন্যান্য গোনাসমূহ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিবেন (নিসা ৪৮)। উল্লেখ্য যে, মিরক্বাত, রাদ্দুল মুহতার, মিসকুল খিতাম প্রভৃতি গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে যে, মি‘রাজে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ‘আত্তাহিইয়াতু’ প্রাপ্ত হয়েছিলেন। অথচ একথার স্বপক্ষে কোন বিশুদ্ধ প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরং এটি ছহীহ
মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত ছহীহ হাদীছের সরাসরি বিরোধী। অতএব ভিত্তিহীন এ সমস্ত বক্তব্য থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
মি‘রাজের উদ্দেশ্য ও শিক্ষা :রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মি‘রাজ তথা ঊর্ধ্বলোকে গমনের উদ্দেশ্য ব্যাপক। মহানবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর নবুওয়াতী জীবনে
➡️ মি‘রাজের মত এক মহিমান্বিত ও অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পেছন যে কারণগুলো মুখ্য তা হ’লঃ——-
(১) মহান আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্যে হাযির হওয়া,
(২) ঊর্ধ্বলোক সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন,
(৩) অদৃশ্য ভাগ্য সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান লাভ,
(৪) ইহকাল ও পরকাল সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন,
(৫) স্বচক্ষে জান্নাত-জাহান্নাম অবলোকন,
(৬) পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের সাথে সাক্ষাৎ ও পরিচিত হওয়া,
(৭) সুবিশাল নভোমন্ডল পরিভ্রমণ করা, এবং
(৮) সর্বোপরি এটিকে একটি অনন্য মু‘জিযা
হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা।
মি‘রাজের শিক্ষা সম্পর্কে ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন, মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলকে ‘আবদ’ বা দাস বলে সম্বোধন করেছেন। এর মর্মার্থ এই যে, বান্দার জন্য এর চেয়ে সম্মানিত কোন নাম আল্লাহর কাছে নেই, থাকলে অবশ্যই সে নামে রাসূল (ছাঃ)-কে সম্বোধন করে সম্মানিত করা হ’ত। আর মি‘রাজের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হ’ল সর্বপ্রকার গর্ব-অহংকার চূর্ণ করে আল্লাহর সবচেয়ে বড় দাস হওয়ার চেষ্টা করা। কারণ দাসত্বের মধ্যেই সর্বাধিক সম্মান ও মর্যাদা নিহিত রয়েছে। অতএব জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর দাসত্ব করা ও ছালাতের হেফাযত করাই হ’ল মি‘রাজের সবচেয়ে বড় এবং মূল শিক্ষা।।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here