অনুভূতির বার্তা

1
1910

অনুভূতির বার্তা

-শরফুল আনাম

ভরা পূর্ণিমা রাতে কেমন উদাস উদাস লাগছে! বিছানায় গড়াগড়ি দিচ্ছি তবু ঘুম আসছে না! জানালার ফাঁকা দিয়ে আকাশের উজ্জ্বল চাঁদের জ্যোৎস্না এসে বিছানায় পড়ে মন আরও উদাস করে তুলছে। ঘুম না আশায় বিছানা ছেড়ে উঠে, একটা চাদর জড়িয়ে, মোবাইলটা হাতে নিয়ে বাইরে বের হলাম। ভাবছিলাম গান শুনবো আর হাঁটবো। হালকা শীত ও লাগে। আবহাওয়াটা কেমন মধুময়। বাড়ির পাশে একটা ছোট পার্কের মত জায়গা আছে। সেটাকে অবশ্য পার্ক বলা যায় না, তবে মন খারাপে, সময় কাটানোর জন্য একটা ভালো জায়গা। রাত প্রায় ১২ টা বাজে। ভরা পূর্ণিমায় একা একা ভালোই লাগছে। তবে সহযোদ্ধা বা অর্ধাঙ্গিনী হলে রোমান্টিকতার পূর্ণতা পেত। পার্কের মধ্যে একা একা হাটতেছি আর ভাবছি, গান শুনব কোথাও বসে। তবে হাটতে হাটতে খানিকটা দূরে একটা মোবাইলে লাউডস্পিকারে কথা শোনা যাচ্ছে। ওপার থেকে সুমধুর কন্ঠে কোন এক মেয়ের গলার শব্দ। এপাশে বিবাহযোগ্য এক ছেলে বসে কথা বলছে। কাছে গেলে চলে যাবে তাই আমি কিছুটা আড়ালে একটা গাছের গুড়ির উপরে বসলাম। কি বলে শোনার জন্য। অবশ্য একা একা’তো তাই তাদের প্রেমালাপ শুনতে ভালোই লাগবে। তবে শুনতে পাচ্ছি ছেলেটা মেয়েটাকে বলছে। তুমি আমাকে এভাবে কেন ধোকা দিলে? ওপার থেকে মেয়েটা বলে। দেখো, তুমি যখন বারবার কল দিচ্ছিলে, তখন আমি খালামণির সাথে কথা বলতেছিলাম। তার ফোনটা কাটতে পারিনি। এ কারণে তুমি আমাকে ভুল বুঝবে। ছেলেটা বলে না তুমি মিথ্যা বলছো। আমি ২৭ বার তোমাকে কল দিছিলাম। মেয়েটা বলে আমি দেখেছি কিন্তু যদি খালামনির কল কেটে দি তাহলে সে আম্মুকে বলবে যে আমি কথা না বলে কেটে দিছি। পরে আম্মু আমাকে নজর রাখবে। ছেলে বলে তোমার অন্য কেউ আছে আমি ছাড়া। এভাবে মিনিট দশেক অভিযোগ, ঝগড়া শুনলাম। আমার আর গান শোনা হলো না। যখন মোবাইল, ইন্টারনেট, কিছুই ছিল না। একটু ভাবুন তো সেকালের কথা? সেকালে প্রকৃত প্রেম ছিল, মানুষ মানুষকে ধোকা দিত না। একটা চিঠির জন্য, এক সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ, আবার কখনো মাস পেরিয়ে যেত। তবু কোনো অভিযোগ ছিলো না। ছিলো মধুর অপেক্ষা। চিঠিখানা হাতে পৌঁছলে যেন সকল সুখের সন্ধান মিলতো। একবার, বারবার, হাজার বার একই লেখা পড়ত। তবু যেন প্রতিবার পড়তে নতুন কোনো অজানা সুখ খুঁজে পেত। তবে অভিযোগ ছিল এই। এ মাসে তুমি সাতখানা চিঠি দিয়েছো আটখানা দেবার কথা ছিল, আগামী মাসে কিন্তু একখানা বাড়িয়ে দিবে, ৯ খানা চিঠি দিবে। না দেখে মাসের-পর-মাস কাটালেও সকল সময় অনুভবে থাকতো প্রিয় মানুষগুলো। তবে আজ কোন জগতে এসে পৌছালাম! প্রতি মিনিটে মিনিটে যে মানুষটার খোঁজ নেওয়া যাচ্ছে। সে কি করে, তা দেখা যাচ্ছে। তবুও যেন অভিযোগের অন্ত নেই। প্রেম আছে তবু সুখ নেই। এর সাথে ২ দিন ওর সাথে ২ দিন এভাবে পদদলিত হচ্ছে প্রেম নামের মধুর সম্পর্ক গুলো। আবারও মানুষ প্রকৃত প্রেমের সন্ধান পাক ভার্চুয়াল জগতের প্রেমে আটকা না পড়ে, আবারো চিঠি লিখুক। আবারো মাসের-পর-মাস দেখতে না পাওয়া মধুর অপেক্ষায় থাকুক। আবারো প্রকৃত প্রেম আসুক। নারী মাংস ভক্ষণকরা শকুনগুলো থেকে প্রকৃত সুখ মুক্তি পাক!!

1 COMMENT

  1. বাস্তবধর্মী বিশ্লেষণ, প্রেমের আসল মজা পেতে চাইলে আমাদের জেতে হবে মেনুয়াল দুনিয়াতে,যেখানে নেই মিথ্যার ফুলঝুরি , নেই হাজারো অবিশ্বাস্য রম্যরচনা, ছিলো নিখাদ ভালোবাসা আর প্রেমের মৌলিকত্ব।
    তাইতো বলি ভার্চুয়াল আমাদের যতটা আধুনিক করছে তার থেকে বেশী মিথ্যুক ও অভিনেতা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে বিপরিত ব্যাক্তির কাছে,যার কারনেই সমাজে চলছে নানামুখী বিবাহবিচ্ছেদের অজুহাতের গল্প।
    (ধন্যবাদ নব্য লেখক)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here