জাহান্নাম থেকে বাঁচার ও জান্নাত লাভের গুরুত্বপূর্ণ দোয়া:

0
29130
ফিরোজ রব্বানী
(কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক)
জাহান্নাম থেকে বাঁচার ও জান্নাত লাভের গুরুত্বপূর্ণ দোয়া:
★প্রথম দোআ: اللَّهُمَّ أَجِرْنِى مِنَ النَّارِ আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান নার। অর্থ:“হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দাও”
ফজিলত: যে ব্যক্তি ফজর ও মাগরিবের নামাজ শেষে ‘আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান্নার’ সাতবার পাঠ করবে সে যদি ওই রাতে বা দিনে মারা যায় তাহলে অবশ্যই জাহান্নাম থেকে নাজাত পাবে। (-সুনানে আবু দাউদ: ২/৭৪১)
★দ্বিতীয় দোআ:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ’উযু বিকা মিনান্নার। অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।
ফজিলত: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ৩ বার জান্নাত প্রা
র্থনা করে, জান্নাত আল্লাহর কাছে দুয়া করে, হে আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করো। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ৩ বার জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে, জাহান্নাম আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, হে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাও”। (তিরমিযিঃ ২৫৭২, ইবনে মাজাহ ৪৩৪০)
★তৃতীয় দোআ: কবর ও জাহান্নামের আযাব এবং জীবন, মৃত্যু ও দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাওয়ার দোআ…
‎اللَّهُــمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবর, ওয়া মিন ‘আযা-বি জাহান্নাম, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহ্ইয়া ওয়াল মামা-ত, ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল মাসীহিদ দাজ্জা-ল
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি কবরের আযাব থেকে, জাহান্নামের আযাব থেকে, জীবন-মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং মাসীহ দাজ্জালের ফিতনার অনিষ্টতা থেকে। বুখারী ২/১০২, নং ১৩৭৭; মুসলিম ১/৪১২, নং ৫৮৮।
 জাহান্নাম থেকে মুক্তির ১৫ টি অসাধারণ হাদিসঃ—
প্রতিটি মুসলমানের একমাত্র চাওয়া জাহান্নাম হতে মুক্তি ও জান্নাত লাভ করা। কিন্তু চাইলেই কি সব পাওয়া যায়? হ্যা চাওয়ার মতো চাইলে সব পাওয়া যায়। মহান আল্লাহতালা আমাদের সবাইকে জান্নাতে নেওয়ার জন্য পথ বলে দিয়েছেন। সহীহ হাদিস দ্বারা এমন কিছু আমল পাওয়া গেছে যা বাস্তব জীবনে মেনে চললে অবশ্য ই জাহান্নাম হতে মুক্তি পাবো ইনশাআল্লাহ।।
আসুন আমরা হাদিস অধ্যয়ন করে বিষয়গুলো আমল করে আমলি জিন্দেগী গড়ে তুলি।।
এক. গীবত থেকে দূরে থাকা
আসমা বিনতে ইয়াযীদ হতে বর্ণিত, নবী সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার (মুসলিম) ভায়ের অনুপস্থিতিতে (তার গীবত করা ও ইজ্জত লুটার সময় প্রতিবাদ করে) তার সম্ভ্রম রক্ষা করে সেই ব্যক্তি আল্লাহ্‌র কাছে এই অধিকার পায় যে তিনি তাঁকে দোযখ থেকে মুক্ত করে দেন।’ আহমদ, ত্বাবারানী, সহীহুল জামে- ৬২৪০
# কিন্তু বর্তমানের হাল হলো, কোথাও কারো নিন্দা করা হলে আমরা প্রতিবাদ না করে বরং নিজেরাই অংশগ্রহণ করি। তবে নবী সা.-এর এ হাদিস থেকে তারাই শিক্ষা নিবে যারা জান্নাত যেতে ইচ্ছুক।
দুই. প্রতিদিন ৩৬০ বার তাসবিহ, তাহলিল, তাকবীর, তাহমিদ আদায় করা
‘আয়েশা রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘‘আদম সন্তানের মধ্যে প্রত্যেক মানুষকে ৩৬০ গ্রন্থির উপর সৃষ্টি করা হয়েছে। (আর প্রত্যেক গ্রন্থির পক্ষ থেকে প্রদেয় সাদকা রয়েছে।) সুতরাং যে ব্যক্তি ‘আল্লাহু আকবার’ বলল, ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ বলল, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল, ‘সুবহানাল্লাহ’ বলল, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলল, মানুষ চলার রাস্তা থেকে পাথর, কাঁটা অথবা হাড় সরাল, কিম্বা ভাল কাজের আদেশ করল অথবা মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করল, (এবং সব মিলে ৩৬০ সংখ্যক পুণ্যকর্ম করল), সে ঐদিন এমন অবস্থায় সন্ধ্যা করল যে, সে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে দূর করে নিল।’
সহিহ মুসলিম হাদিস-২২২০, হাদিস একাডেমী
তিন. ৪০ দিন তাকবীরে উলার সাথে সলাত আদায় করা
রাসুল সা. বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য ৪০ দিন জামাতে সলাত আদায় করবে এবং তাকবীরে তাহরিমা পাবে অর্থাৎ সলাত আরম্ভ হওয়ার সময় উপস্থিত থাকবে আল্লাহ তাকে ২টি জিনিস থেকে মুক্তি দিবেন। ১- জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন এবং ২- মুনাফিকি থেকে মুক্তি দিবেন।
সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] – হাদিস ২৪১, তাকবিরে উলার ফজিলত অধ্যায়
চার. অসুস্থ অবস্থায় নিম্নের দোয়া পড়া
আবূ সা‘ঈদ খুদরী রা. এবং আবূ হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তাঁরা উভয়েই রাসূলুল্লাহ সা. এর প্রতি সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তিনি বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, অল্লাহু আকবার’ [لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَاللهُ أكْبَرُ] (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং আল্লাহ সবচেয়ে বড়) বলে, আল্লাহ তার সত্যায়ন করে বলেন, ‘আমি ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই এবং আমি সবচেয়ে বড়।’
আর যখন সে বলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহদাহু লা শারীকা লাহ’ [لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ] (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন অংশী নেই), তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, আমি একক, আমার কোন অংশী নেই।’
আর যখন সে বলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হাম্দ’ [لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ] (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, সার্বভৌম ক্ষমতা তাঁরই এবং তাঁরই যাবতীয় প্রশংসা), তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, সার্বভৌম ক্ষমতা আমারই এবং আমারই যাবতীয় প্রশংসা।’
আর যখন সে বলে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, অলা হাওলা অলা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ [لاَ إله إِلاَّ اللهُ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ باللهِ] (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই এবং আল্লাহর প্রেরণা দান ছাড়া পাপ থেকে ফেরার এবং সৎকাজ করার বা নড়া-চড়ার শক্তি নেই), তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই এবং আমার প্রেরণা দান ছাড়া পাপ থেকে ফিরার এবং সৎকাজ করার বা নড়া-চড়ার শক্তি নেই।’
নবী সা. বলতেন, ‘যে ব্যক্তি তার অসুস্থ অবস্থায় এটি পড়ে মারা যাবে, জাহান্নামের আগুন তাকে খাবে না।’ (অর্থাৎ সে কখনো জাহান্নামে যাবে না।) (সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] – ৩৪৩০, দোয়া অধ্যায়)
পাঁচ. বেশি-বেশি দান করা
আল্লাহর রাসুল সা. বলেন, তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো; যদিও খেজুরের এক টুকরো সাদকাহ করে হয়। আর যে ব্যাক্তি এরও সামর্থ্য রাখে না, সে যেন ভাল কথা বলে বাঁচে।(সহিহুল বুখারি- ১৪১৩, তাওহীদ পাবলিকেশন)
ছয়. জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি চেয়ে দোয়া করা
হজরত আনাস রা. বলেন, আল্লাহর রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ৩ বার আল্লাহ্‌র কাছে জান্নাত চায়, জান্নাত তখন বলে, হে আল্লাহ্‌! ঐ ব্যাক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। পক্ষান্তরে যে ব্যাক্তি ৩ বার জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চেয়ে দোয়া করে, জাহান্নাম বলে; ‘হে আল্লাহ্‌ ঐ ব্যাক্তিকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দাও।’ (সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত] – ২৫৭২, জান্নাতের বিবরণ অধ্যায়)
# জান্নাত চাওয়া ও জাহান্নাম থেকে বাচার দোয়া-
«اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ».
(আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ‘উযু বিকা মিনান্নার)
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই। (আবূ দাউদ- ৭৯৩, সলাত অধ্যায়)
সাত. যোহরের ফরজ নামাজের পূর্বে ৪ এবং পড়ে ৪ রাকাত নামাজ আদায় করা
উম্মে হাবীবা রা. বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি বরাবর যোহরের পূর্বে চার রাক’আত এবং যোহরের পরে চার রাক’আত ছালাত আদায় করবে আল্লাহ্‌ তার প্রতি জাহান্নাম হারাম করে দিবেন।’
ইবনে মাজাহ- ১১৬০, তিরমিযী ৪২৭-২৮, আবূ দাঊদ ১২৬৯, আহমাদ ২৬২৩২। তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: মিশকাত ১১৬৮, সহীহ আবী দাউদ ১১৫২
[অর্থাৎ যোহরের ফরয নামাজের আগে ৪ রাকাত এবং পড়ে ২ রাকাত ২ রাকাত করে ৪ রাকাত এই মোট ৮ রাকাত যেটা আমরা পড়ে থাকি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here