আশুরার ইতিহাসথেকে: আমরা কি  শিখছি?

0
2008

পৃথিবীর ইতিহাসের অসংখ্য কালজয়ী ঘটনার জ্বলন্ত সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে পুণ্যময় এ মাস। আর কারবালার ঐতিহাসিক ট্র্যাজেডিও আশুরার দিনে সংঘটিত হওয়ায় পৃথিবীর ইতিহাসে এক নতুন ব্যাথা যুক্ত হয়েছে। রচিত হয়েছে শোকাভিভূত এক কোলো অধ্যায়।

 কারবালার ঘটনা:

সেদিন ইমাম  হোসাইন (রা.) ও তার ৭২ জন সঙ্গী-সাথীকে কারবালার প্রান্তরে এজিদের বাহিনী অত্যন্ত নির্মমভাবে শহীদ করেছিল। এজন্য এই দিনটি মুসলিম মিল্লাতের নিকট যেমন বেদনার বার্তা বহন করে আনে ঠিক তেমনি সত্যাশ্রয়ী জীবনযাত্রার আশার আলোও সঞ্চারিত করে।

আশুরা সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ৬১ হিজরীর আশুরাতে কারবালা প্রান্তরে ইমাম  হোসাইন (রা.) কে সপরিবারে শাহাদাত লাভের ঘটনার জন্য। ৬১ হিজরীর ১০ মুহররম শুক্রবার আশুরার দিনে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নাতী হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) হক ও ইনসাফ চলমান রাখার লক্ষ্যে কারবালা প্রান্তরে ত্যাগের অপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। যুগ যুগ ধরে যা মানুষকে ন্যায় ও সত্য সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেরণা যুগিয়ে যাবে।

আশুরার দিনের আরো কিছু ঘটনা :

মুহররমের ১০ তারিখে আরো অনেক ঘটনা ঘটেছে।

*আদম (আঃ)কে সৃষ্টি করা হয়েছিল ১০ই মুহররম।

* ১০ই মহররম আদম (আঃ) কে বেহেশতে প্রবেশ করানো হয়েছে ।

* আশুরাতেই আদম (আ.) কে বেহেশত থেকে দুনিয়ায় প্রেরণ করা হয়েছিল।

* আদম (আ.) এ তওবা কবুল করা হয়েছিল এই আশুরাতেই।

* মা হাওয়া (আ.) এর সাথে আদম (আ.) পুনরায় সাক্ষাত হয়েছিল এই ১০ই মুহররম।

* আসমান-জমিন সৃষ্টি করা হয়েছিল  মুহররম মাসেই।

* আরবের জাহেলরাও মহররম মাসটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিত।

* চাঁদ-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, পাহাড়-পর্বত, সাগর-মাহাসাগর সৃষ্টি করা হয় এই মহররম মাসেই।

* আশুরাতেই জন্ম গ্রহণ করেন ইব্রাহীম (আ.)।

* আশুরাতেই হযরত মূসা (আ.) এবং আল্লাহপাকের মধ্যে কথোপকথোন হয়েছিল।

* হযরত মূসা (আ.) এর উপর তৌরাত কিতাব নাজিল হয়েছিল এই আশুরাতেই।

* আশুরাতেই মূসা (আ.) তার সাথীদের নিয়ে নীল নদ পার হন এবং ফেরাউন বাহিনী পানিতে ডুবে মরে।

* হযরত আইয়ুব (আ.) দীর্ঘ ১৮ বছর কঠিন রোগ ভোগের পর সুস্থ হয়ে উঠেন এই আশুরাতেই।

* হযরত সোলায়মান (আ.) পুনঃ বাদশাহী লাভ করেন আশুরাতেই।

* আশুরাতেই দাউদ (আ.) এর তওবা কবুল করা হয়।

* হযরত ইউছুফ (আ.) তাঁর পিতা হযরত ইয়াকুব (আ.) এর সাথে মিলিত হন এই আশুরাতেই।

* হযরত ইসা (আ.) জন্ম গ্রহণ করেন আশুরাতেই।

* হযরত ইসা (আ.) কে আল্লাহপাক সশরীরে আসমানে তুলে নেন এই আশুরাতেই।

* আশুরাতেই আল্লাহপাক হযরত ইদ্রিস (আ.) কে জীবিত করেন এবং তাকে জান্নাতে উঠিয়ে নেয়া হয়।

* হযরত নূহ (আ.) এর জাহাজ চল্লিশ দিন পর পাহাড়ের কিনারে ভিড়ে আশুরাতেই।

* আশুরাতেই হযরত নূহ (আ.) জমিনে অবতরণ করেন।

* আশুরাতেই উম্মতে মুহাম্মদীর গুনাহ মাফ হয়।

* জিব্রাইল (আ.) আশুরাতেই দুনিয়াতে আগমন করেন।

* আল্লাহপাক দুনিয়াতে প্রথমবার রহমত নাজিল করেন ও রহমতের বৃষ্টি বর্ষণ করেন আশুরাতেই।

* হযরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে বের হয়ে আসেন আশুরাতেই।

আশুরার দিবসে করণীয়:

প্রতিটি ইবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার অন্যতম দুটি শর্ত রয়েছে। এক. আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইবাদত করা। দুই. ওই ইবাদত রাসুল (সা.)-এর আনীত শরিয়ত এবং বর্ণিত পথ ও পন্থা অনুসারে হওয়া। আশুরার দিবসে রোজা রাখা ছাড়া অন্য কোনো রীতিনীতি, সংস্কৃতি ও ইবাদত ইসলাম অনুমোদন করে না। তাই কেবল রোজা রাখার মাধ্যমেই দিনটিকে পালন করতে হবে। আশুরার শিক্ষা হল সব মিথ্যার সাথে লড়াই করে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

আশুরার নিষিদ্ধ কার্যাবলী:

আশুরার সুমহান মর্যাদা ও তাৎপর্যকে কেন্দ্র করে মুসলিম সমাজে কিছু নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড ও কুসংস্কারের প্রচলন হয়ে গেছে। সেসব থেকে বেঁচে থাকা মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য। নিষিদ্ধ কার্যাবলী উপস্থাপন করা হলো। মহররম আসার সঙ্গে সঙ্গে হজরত হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের ওপর মাতম-বিলাপ শুরু করা ও নিজ দেহে ছুরিকাঘাত করা গর্হিত অপরাধ। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘শোকে বিহ্বল হয়ে যে ব্যক্তি গাল চাপড়ায়, কাপড় ছিঁড়ে ও জাহেলি যুগের মতো আচরণ করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’- বুখারি : ১২৯৭।

তবে কিছু অতি উৎসাহী মুসলীম তাজিয়া মিছিলের  না করে ইসলাম বর্হিভূত কাজ করে থাকে। যেমন শরীর উলঙ্গ করে শরীরে আঘাত করে, শরীরকে খত বিখ্যত করা, নানা রকম মাতম করা। যা ইসলামী শরীয়তের কোন ভিত্তি নেই।

পরিশেষে বলা যায়, আশুরার এই ঐতিহাসিক ঘটনার মূল চেতনা হচ্ছে ক্ষমতার লোভ, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য চক্রান্ত ও নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই। বর্তমান বিশ্বে আশুরার এই শিক্ষা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

সংগ্রহিত ও সম্পাদিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here